পাউলোনিয়া গাছের বাণিজ্যিক উৎপাদনে কাঠ ব্যতীত
যে সকল বাড়তি পণ্য অনায়াসে উৎপাদন করা যায়

মধুর বিপুল উৎস

সৌন্দর্যের পাশাপাশি পাউলোনিয়া ফুল এক আকর্ষণীয় ও তীব্র সৌরভ ছড়ায়, যা একে চমৎকার মাধুকরী বৃক্ষে পরিণত করেছে। এক হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ৩ বছর বয়সী পাউলোনিয়া গাছ থেকে ৮০০ কেজিরও বেশি মধু আহরণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধার দিকটি হলো, পাউলোনিয়া গাছের বৃদ্ধিতে কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় না। ফলে মৌমাছিদের কোনো ক্ষতি হবার আশঙ্কা নেই। আর, এটি প্রমাণিত যে, মৌমাছিরা প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন আবহাওয়াতেই সর্বোচ্চ উৎপাদনশীল হতে পারে। কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি তারা সহ্য করতে পারে না।

পাউলোনিয়া ফুলের মধু স্বচ্ছ, উজ্জ্বল, সুরভিত ও অর্গানিক মধু হয়ে থাকে বলেই এটি উন্নত মানের মধু। সুস্বাদু হবার পাশাপাশি ঔষধি হিসেবেও এটি কার্যকর। ব্রংকাইটিস, ফুসফুস ও শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এ মধু কার্যকর প্রভাব রাখতে পারে। পিত্তথলি, লিভার ও হজমের কার্যকারিতা বাড়াতেও এটি উপকারী। এটি কেমিক্যালমুক্ত ও সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ায় ডায়াবেটিক রোগীরা অনায়াসে খেতে পারে। লক্ষণীয় যে, পাউলোনিয়া মধুর যেসব উপকারী উপাদান, সেগুলো এর ফুলের মধ্যেই জৈবিকভাবে বিদ্যমান থাকায় এর ফুলগুলোও খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

খাদ্য হিসেবে ব্যবহার

পাউলোনিয়া ফুলকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের চৈনিক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি, ক্রিম দিয়ে রিং বা শিং আকৃতিতে এগুলোর ফ্যাশনেবল পরিবেশনার বিষয়টিও অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। এটিকে শুনতে হয়তো অদ্ভুত রকমের শোনাবে; কিন্তু ইতোমধ্যেই ইউরোপের বহু রেস্টুরেন্টের মেন্যুতে এটি জায়গা করে নিয়েছে।


চিকিৎসা ও প্রসাধনী তৈরীতে পাউলোনিয়া

এটা প্রমাণিত যে, পাউলোনিয়ার পাতায় এমন পদার্থ রয়েছে, যা লিভার, কিডনি ও পিত্তথলির জন্য উপকারী। পাশাপাশি এর পাতা ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সহায়ক। পাউলোনিয়া পাতার বিভিন্ন ঔষধি বৈশিষ্ট্য চীনে বহুকাল ধরেই পরিচিত। এমনকি সেখানকার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো অনেক আগে থেকেই পাউলোনিয়াকেন্দ্রিক নানাবিধ ওষুধ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে আসছে।

পাতা, ফল ও কাঠের নির্যাস থেকে উৎপাদিত ঔষধ কফ নিঃস্বারক ঔষধ তৈরীতে ব্যবহার হয়। পাতা ও ফলের নির্যাস নিয়মিত ব্যবহারে চুল সবল হয় এবং সাদা চুল কালো করে। ফলের নির্যাস থেকে তৈরী ঔষধ কফ ও শ্বাসকষ্ট নিবারণ করে। এর ফল উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। সাম্প্রতিক সময়ে ওষুধ, ক্রিম ও পারফিউম তৈরীতে পাউলোনিয়া পাতার নির্যাস ব্যাপকহারে ব্যবহার হচ্ছে। পাউলোনিয়া ওয়াইন এর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।


সুগন্ধি দ্রব্যাদি তৈরীতে পাউলোনিয়া

পাউলোনিয়া ফুলের সুঘ্রাণ অনেকটা ভ্যানিলা ও গুঁড়ো আলমন্ডের মতো। এটা প্রমাণিত যে, হেলিওট্রপিন নামক যে নির্যাসের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সুগন্ধি ও অন্যান্য দ্রব্য (যেমন- তাহিতিয়ান ভ্যানিলা) সুবাসিত হয়ে থাকে, পাউলোনিয়া ফুলেও সেই নির্যাস বিদ্যমান। গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর ফুলের সৌরভকে আলাদা করে নেয়া হয়।


পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার

পাউলোনিয়া গাছের সতেজ পাতা গবাদিপশু (গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া) মোটাতাজাকরণে ব্যবহার করা সম্ভব। এর সবুজ পাতায় প্রোটিনের পরিমাণ ২০% এবং ঝরে পড়া বাদামি পাতায় তা ১২%। এতে বিদ্যমান বিভিন্ন উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে এর হজম সক্ষমতা ৬০% পর্যন্ত পৌঁছায়। যদি গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের উদ্দেশ্যে পাউলোনিয়া চাষের পরিকল্পনা করা হয়, সেক্ষেত্রে গবাদিপশুর জন্য সর্বোচ্চ প্রোটিনের সম্ভাব্যতা নিশ্চিত করতে হলে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে নিয়ে উৎপাদনে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে, গ্রীষ্মের শেষে উর্বর মাটিতে পাউলোনিয়া রোপণ শুরু করতে হবে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ১ হেক্টর জমিতে বছরে ৩৫ থেকে ৪০ টন উদ্ভিজ্জ কাঁচামাল আহরণ করা সম্ভব। এর পাতা থেকে পিলেট তৈরী করে সারা বছর গবাদি পশুর খাবার যোগান দেয়া যায়।