রোপণ, ফলন ও উৎপাদন

জমি প্রস্তুতকরণ

৫-৮ পিএইচ যুক্ত মাটিতে পাউলোনিয়া গাছ ভালো জন্মে। বাণিজ্যিক বাগানের জন্য প্রথমেই লাইন থেকে লাইন ১০ ফুট এবং গাছ থেকে গাছ ১০ ফুট দূরত্বে রোপণের জন্য গর্তের জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। তারপর ১.৫ x ১.৫ x ১.৫ ফুট আকারে গর্ত করতে হবে। (দোআঁশ মাটি না হলে ৪০ ভাগ মাটি + ৬০ ভাগ বালু মিশিয়ে মাটির ধরন পরিবর্তন করতে হবে) । প্রতি গর্তে নিম্নলিখিত সার প্রয়োগ করতে হবে-


চারা রোপণ

জমি প্রস্তুতের পর প্রতি গর্তে নিম্নলিখিত সার প্রয়োগ করতে হবে-

জৈব সার (শুকনো গোবর)

২-৩ কেজি

টি.এস.পি

২০০ গ্রাম

গ্রামএম.ও.পি

১৫০ গ্রাম

ডি.এ.পি

১০০ গ্রাম

ফুরাডান বা বাসুডিন (কীটনাশক)

২০ গ্রাম

রুট গ্রো

২০ গ্রাম

গর্তের মাটিতে বর্ণিত সার মেশানোর পর মাটি চাপা দিয়ে ৭ দিন রেখে দিতে হবে। পরে কোদাল দিয়ে মাটি নাড়াচাড়া করে গর্তের অবাঞ্ছিত গ্যাস বের করে চারাগাছ রোপণ করে প্রয়োজন মতো পানি দিতে হবে। চারাগাছের রক্ষণাবেক্ষণে ভালোভাবে নিরাপত্তা বেষ্টনি দিতে হবে যেন গরু, ছাগল বা অন্য কোনো প্রাণী চারাগাছের ক্ষতি করতে না পারে।


চারা প্রস্তুতে স্বল্প রক্ষণাবেক্ষণ

পাউলোনিয়ার চারা প্রস্তুত ও রক্ষণাবেক্ষণে অন্য যেকোনো গাছের তুলনায় জটিলতা কম। যথাযথভাবে চারা উৎপাদন করা হলে মজবুত মূলের কারণে এই গাছটি বালুময় মাটিতেও বেড়ে উঠতে সক্ষম।


পানি সেচ, প্রয়োগের মাত্রা ও ব্যাপ্তিকাল

গ্রীষ্মকালে যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয় সেসব এলাকা ছাড়া গাছে পানি দেয়ার উপরই ভিত্তি করে পাউলোনিয়া গাছের দ্রুত বেড়ে ওঠা। গাছ লাগানোর পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে যে, মাটি যেন পর্যাপ্ত আদ্র থাকে। ড্রিপিং পদ্ধতির পানি সরবরাহ সেচের আধুনিক সমাধান। চারা রোপণের পর প্রথম গ্রীষ্মে কয়েক দিন পর পর হাল্কা সেচ দিলে গাছের শিকড়ের সুন্দর বিস্তার ঘটে। দো-আঁশ মাটি থেকে বালু মাটিতে পানি বেশি দরকার। তবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি দিলে মাটিতে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো গাছের শিকড় অঞ্চল (Root Zone) থেকে নিচে চলে যাবে।

এটাও লক্ষ করা জরুরি যে, পাউলোনিয়া গাছের পাতা গরমের সময় নেতিয়ে/চুপসে যাওয়া অতিরিক্ত প্রস্বেদন এড়ানোর জন্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। গরমে যদি গাছের পাতা নেতিয়ে/চুপসে যায় এবং গাছের গোড়ার মাটি আর্দ্র থাকে তাহলে সে গাছের গোড়ায় নতুন করে পানি দেয়া যাবে না। অতিরিক্ত পানিতে শিকড় পচে যাবার ঝুঁকি বাড়বে। গোড়ায় পর্যাপ্ত পানি থাকলে দিনের শেষে গাছের পাতা আবার সতেজ হয়ে উঠবে। গাছের দ্রুত বৃদ্ধিকে চালু রাখতে গ্রীষ্মের উষ্ণ দিনগুলোতে নিম্নলিখিত হারে সেচ প্রয়োগ করতে হবে।

চারার বয়স

গরমে প্রতি চারায় পানির পরিমাণ

কয়দিন পর পর পানি দিতে হবে

১-৮ সপ্তাহ

১-২ লিটার

৩-৪ দিন পর পর

৩-৪ মাস

২-৩ লিটার

৪-৫ দিন পর পর

৫-৭ মাস

৩-৪ লিটার

৫-৭ দিন পর পর

২য় থেকে ৪র্থ বছর

৭-৮ লিটার

প্রতি সপ্তাহে ১ বার

ক্রমান্বয়ে পানির পরিমাণ ও সরবরাহের সময় হ্রাস করা যেতে পারে। তবে খরার দিনে গাছের সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বয়ষ্ক গাছেও সেচের প্রয়োজন হতে পারে। যদি কোনো কারণে সেচ দেয়া না গেলেও পাউলোনিয়া গাছ খরায় বেঁচে থাকবে, কিন্ত এতে গাছের পাতা ঝরে যায়, যা পরবর্তী বৃষ্টি আসার আগ পর্যন্ত গাছের বৃদ্ধি থামিয়ে দেবে। অল্প পানি দেয়ার তুলনায় বেশি পানি দিলে গাছের বেশি ক্ষতি হয়। পর্যবেক্ষণ আর সাধারণ জ্ঞানের মাধ্যমেও সঠিক পানি সরবরাহ করা সম্ভব। চার বছর পর থেকে সাধরণত গাছে আর পানি দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না।


রোপণ পরবর্তী করণীয়

রোপণের পর গাছের গোড়া থেকে ৬ ইঞ্চি (১৫ সে.মি) দূরে ৫ ফুট (১.৫ মিটার) উঁচু খুঁটি গেড়ে দিতে হবে। ১ বছরের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে গাছের গুড়ি থেকে বেরিয়ে আসা শিকড় ও কাণ্ড কেটে দিতে হবে। তাছাড়া প্রতি বছর গাছের কাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসা ডালপালা কেটে দিতে হবে। বর্ষাকালের শুরুতে এবং শেষে গাছের গোড়ায় জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি বছর গাছ বৃদ্ধির আনুপাতিক হার লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে ৭-৮ বছর যত্ন নেয়ার পর গাছের কাণ্ডের বেড় প্রায় ৪০-৪৬ ইঞ্চি (১/১.২ মিটার) হলে গাছ কেটে কাঠ সংগ্রহ করতে হয়। বছরের যেকোনো সময়েই এর কাণ্ড বা কাঠ কাটা যায়। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় বা মওসুমের প্রয়োজন নেই।


বিশেষ দ্রষ্টব্য: গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হলে বা অন্য কোন সমস্যা দেখা দিলে চারা সরবরাহকারীকে দ্রুত অবহিত করুন।