পাউলোনিয়া কাঠের ব্যবহার

পাউলোনিয়া কাঠের ব্যবহার

চীন ও জাপানে ২৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পাউলোনিয়া কাঠের বহুবিধ ব্যবহার হয়ে আসছে। এর অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এখন ইউরোপেও এই কাঠের বিশাল চাহিদা ও বাজার গড়ে উঠেছে।

সাধারণত যেসব পণ্য তৈরীতে পাউলোনিয়া কাঠ বহুল ব্যবহৃত হয়-

  •   ঘর বা আবাসন তৈরীর উপকরণ-এটি উচ্চ শক্তিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় ঘর তৈরীতে অন্যান্য কাঠের মতো অতিরিক্ত কোন শক্তি উপাদান সংযোজনের প্রয়োজন হয় না।
  •   ফার্ণিচার বা আসবাবপত্র-ট্যানিন নামক পদার্থ থাকায় কাঠে কখনোই ঘুনপোকা আক্রমণ করতে পারে না বিধায় ফার্ণিচার তৈরীতে পাওলোনিয়া কাঠের জুড়ি মেলা ভার।
  •   বিমান ও প্যাচ ফিটিংস-তৈরীতে হাল্কা অথচ মজবুত কাঠের প্রয়োজন পরে বলেই এর ব্যবহার বহুল পরিচিত।
  •   ওয়াটার স্পোর্টস উপকরণ-যেমন সার্ফ বোর্ড, ওয়েক বোর্ড ও স্কি ইত্যাদি
  •   ভেনার্স (পাতলা তক্তার আবরণ)-প্লাইউড তৈরীতে এর ব্যবহার বহুল প্রচলিত।
  •   বাদ্যযন্ত্র-বিশেষ করে গিটার ও একই ধরনের বাদ্যযন্ত্র।
  •   কাঠের ড্রাম বা ব্যারেল-যেসব পাত্রে ওয়াইন তৈরী বা এসিড সংরক্ষণ করা হয়।
  •   মৌমাছির বাক্স-মৌমাছির বাক্স তৈরীতে অন্তরক বা বিদ্যুত কুপরিবাহী অর্থাৎ কাঠ ভিজলেও যাতে বিদ্যুৎ চলাচল করতে না পারে এমন কাঠের প্রয়োজন পরে। পাউলোনিয়া কাঠের ঘনত্ব ও এমন বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় মৌ-বাক্স তৈরিতে এই কাঠ অনন্য।
  •   কাঠের সাঁকো বা পোল-গ্রাম-গঞ্জে এর প্রয়োজনীতা অপরিহার্য।
  •   হস্তশিল্প বা কারুকাজ-এই কাঠ সহজেই বাঁকানো বা এর দিক পরিবর্তন করা যায়।
  •   ভাতের থালা ও অন্যান্য পাত্র-প্রাচীনকাল থেকেই এই কাঠের ব্যবহার হয়ে আসছে।
  •   কাঠের বাক্স-প্রাচিন কাল থেকেই এই কাঠের তৈরী উপহার বাক্স, সিন্দুক, পেন্টিং সংরক্ষণের বাক্স ও অন্যান্য অনেক প্রয়োজনীয় নক্সা করা বাক্স যা আজও খুবই জনপ্রিয় ও মূল্যবান হিসাবে প্রসিদ্ধ।
  •   চারকোল-আতশবাজি তৈরী ও জ্বালানি হিসেবে এই কাঠের চারকোল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, জনপ্রিয়, পসিদ্ধ ও বহুল ব্যবহৃত।
  •   মণ্ড-পাউলোনিয়া কাঠের মণ্ড কাগজ শিল্পের জন্য উন্নত গুণসম্পন্ন এক অপরিহার্য উপাদান। পার্টিকেল বোর্ড তৈরীতেও এর পাল্প ব্যবহার হচ্ছে।
  •   উড সেভিং-পাউলোনিয়া কাঠের সেভিং নিরোধক হওয়ায় নিরাপদ প্যাকেজিং, খামার ও অন্যান্য যেখানে সেভিংস এর প্রয়োজন পরে সেখানেই এর উত্তম ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় এবং এর চাহিদাও ব্যাপক।
  •   প্যাকিং-যেহেতু এই কাঠ ওক ও পাইন থেকে হালকা কিন্তু কার্যগুণ উন্নত ও অধীক তাই প্যাকিং এর জন্য এর চাহিদা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছে।
  •   পাউলোনিয়া কফিন-এর ফিনিসিং অত্যন্ত মসৃণ, কোমল। এটি গন্ধ, ফাংগাস ও গ্যাস নিরোধক তাই পাউলোনিয়া কফিনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটি ইউরোপে অত্যন্ত মূল্যবান ও আভিজাত হিসাবে সমাদৃত।
  •   নক্সার কাজের জন্য এই কাঠ অদ্বিতীয়-পাউলোনিয়া কাঠের নক্সা ও ফিনিশিং চোখে পরার মতো। একবার এই কাঠ নক্সায় ব্যবহার করলে অন্য কোন কাঠ আর বিবেচনায় আসবে না।

সাম্প্রতিক গবেষনায় এই কাঠের প্রযুক্তিগত, গুণগত মান ও টেকসই প্রমাণিত হওয়ায় সার্ফবোর্ড তৈরীতে এর জনপ্রিয়তা অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া বহুল ব্যবহৃত ও টেকসই পণ্যের ক্ষেত্রে পাউলোনিয়া কাঠ শুধু প্রয়োজনীয়ই নয় অতুলনীয়ও বটে।

অন্যান্য কাঠের তুলনায় পাউলোনিয়া আদ্রতা ও লবণাক্ততা কম শোষণ করে, তাছাড়া এই কাঠের ওজন ও টেকসইমাত্রা সঠিক পরিমানে থাকায় ওয়াটার স্পোর্টস সরঞ্জামাদী তৈরীতে এর চাহিদা অপ্রত্যাশিত। সার্ফবোর্ড তৈরীতে এক প্রকার প্রাকৃতিক তেলের প্রলেপ দেওয়া হয় যা সূর্যরশ্মি ও লবনাক্ততা থেকে এটিকে রক্ষা করে, যেহেতু পাউলোনিয়া কাঠের রয়েছে লবণাক্তাতা শোষণ ক্ষমতার বাড়তি সুবিধা তাই এর তৈরী সব পণ্যেরই স্থায়িত্ব কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এটি বাড়িতে বসে সহজেই তৈরী ও স্বল্প রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যায়।

এটা প্রমাণিত যে সার্ফবোর্ড, কায়াকস, স্পীডবোর্ড, নৌকা বা যে কোন জলযান আজকাল ফাইবার গ্লাস দ্বারা তৈরির প্রচলনের ফলে পরিবেশের জন্য তা মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু পাউলোনিয়া কাঠের একটি বিশেষগুণ ও আকর্ষণীয় দিক হলো এই কাঠ অতিরিক্ত পরিবেশবান্ধব বা ইকো-ট্রি নামে প্রসিদ্ধ, তাই এইসব পণ্য তৈরিতে গবেষকগণ হরহামেশাই পাউলোনিয়া কাঠের পরামর্শ দিয়ে থাকেন যা আগামীর পৃথিবীকে পরিবেশদূষণের হাত থেকে রক্ষা করে পরিবেশের ভারসাম্যতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।