পাউলোনিয়া গাছের বৈশিষ্ট্য ও বিশদ বিবরণ

পাতা

রোপণের প্রথম বছরে পাউলোনিয়া গাছে বড় বড় তন্তুযুক্ত পাতা গজায়, যা প্রায় ২০-৩৪ ইঞ্চি (৫০-৮৫ সে.মি) ব্যাস পর্যন্ত পৌঁছায়। এর পাতা দেখতে অনেকটা হৃৎপিণ্ড আকৃতির হয়। কিনারাগুলো গোলাকার, উপরাংশের রঙ উজ্জ্বল সবুজ, নিচের দিকের রঙ খানিকটা ফ্যাকাশে। সাধারণত ঋতুর পরিবর্তনে পাতার রঙ বদলায় না। তবে, পাতা ঝরার মওসুমে এগুলো সবুজ থেকে ধীরে ধীরে বাদামি রঙ ধারণ করে।


ফুল

পাউলোনিয়া গাছের ফুল ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে ফোটে। এই ফুল সাধারণত ৬-৮ সপ্তাহ থাকে। যার কারণে শহর কিংবা পার্কসমূহের সবুজায়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পাউলোনিয়াকে আদর্শ গাছ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর ফুলগুলো আকারে বড়, উজ্জ্বল নীল-বেগুনি বা সম্পূর্ণ সাদা রঙের হয়ে থাকে। ফুলগুলো ঘণ্টা আকৃতির হয়ে থাকে। এর ব্যাস প্রায় ২.২৫ ইঞ্চি (৬ সে.মি) পর্যন্ত হয়। নীল, বেগুনি বা সাদা রঙের এই ফুল কোমল ও রেণুযুক্ত হয়ে থাকে। এ ফুল থেকে উন্নতমানের মধু আহরণের পর ফুল পরিপূর্ণ আকার ধারণ করলে প্রয়োজন অনুযায়ী সংগ্রহ করা যেতে পারে।


ফল

এর ফল দেখতে অনেকটা হুক বা আঙটা পরানো কৌটা বা ক্যাপসুলের মতো। এগুলো ১০ মি.মি পর্যন্ত লম্বা হয়।


বীজ

এর বীজ দেখতে প্রজাপতি আকৃতির হয়ে থাকে। পাতলা আবরণ বা ঝিল্লিযুক্ত এসব বীজ ২ থেকে ৭ মি.মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।


মূল

পাউলোনিয়া গাছের মূল মাটির প্রায় ২৫-৩০ ফিট (৮-৯ মিটার) পর্যন্ত গভীরে পৌঁছায়। তাই এ গাছ রাস্তার পাশে রোপণ করা হলে এর পাড়গুলো অনেক শক্ত থাকে, যা প্রাকৃতিক পাইলিংয়ের মতো কাজ করে। ফলে কৃত্রিম পাইলিংয়ের প্রয়োজন হয় না। এবং রাস্তাগুলো যেকোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ, বন্যা ও ভূমি কম্পেও অনায়াসে সুরক্ষিত থাকে যুগ যুগ ধরে।


কাণ্ড

এই গাছের কাণ্ড ১.৫ থেকে ২ বছর বয়সী গাছের কাণ্ডের পরিধি সাধারণত ৮-১০ ইঞ্চি (২০-২৫ সে.মি) এবং ৩ থেকে ৪ বছর বয়সী গাছের কাণ্ডের পরিধি প্রায় ১৬-১৮ ইঞ্চি (৪০-৪৫ সে.মি) হয়। পূর্ণবয়স্ক একটি পাউলোনিয়া গাছের কাণ্ডের পরিধি ৪০-৪৫ ইঞ্চি (১০০-১১৫ সে.মি) এর বেশিও হতে পারে।


বাকল

এই গাছের বাকল পাতলা, মসৃণ এবং হালকা ধূসর রঙের হয়। এই কাঠ অত্যন্ত মসৃণ, নমনীয় কিন্ত শক্ত এবং উচ্চ চাপ ও তাপ (৪৭০°সে.) সহনশীল। কাঠের রঙ সাদা বা হাল্কা হলুদ হয় বিধায় সুন্দর ফার্নিচার তৈরী করা যায়। এই কাঠ সহজে ফাটে না, ভাঙে না ও পচে না।


এ কাঠের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য

পাউলোনিয়া কাঠের মধ্যে ট্যানিন নামক পদার্থ বিদ্যমান থাকায় এই কাঠ ঘুনপোকা বা অন্য কোনো কাঠখেকো পোকামাকড় দ্বারা কখনোই আক্রান্ত হয় না।


দ্রুত বর্ধনশীল গাছ

পাউলোনিয়া গাছ অন্য যেকোনো গাছের চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ৭-৮ বছরের ১টি গাছ থেকে প্রায় ১৫০-২০০ বোর্ড ফিট = ১২-১৬ ঘনফুট (০.৩-০.৫ ঘনমিটার) কাঠ পাওয়া যায়। এই গাছ এবং এর যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ও প্রবৃদ্ধি মানবজাতির জন্য একটি রত্নবিশেষ। এটি মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং মাটিকে পুনরায় উর্বর ও উৎপাদনশীল করে তোলে। শুধু এই একটি পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই আমরা এর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারব যে, প্রতিদিন একটি পরিণত পাউলোনিয়া গাছ ২২ কেজি কার্বন ডাই- অক্সাইড শোষণ করে এবং ৬ কেজি অক্সিজেন দেয়। রোপণের প্রথম বছরে পাউলোনিয়া গাছ সবচেয়ে দ্রুত বর্ধিত হয়। প্রথম বছরেই এটি প্রায় ১৫-২০ ফুট (৪.৫-৬.১ মিটার) এবং ৭-৮ বছরে গাছটি ৬০-৬৫ ফুট (১৮-২০ মিটার) লম্বা হয়।


ল্যান্ডস্কেপিং ও পরিবেশ দূষণমুক্তকারী গাছ

পাউলোনিয়া গাছটি বিপুল মাত্রায় পরিবেশবান্ধব; বড় বড় পাতা, আকর্ষণীয় ফুল ও প্রশস্ত চূড়ার কারণে এটি সুশীতল ছায়া দিতে পারে। বিশেষ করে জনবহুল ও দূষণাক্রান্ত শহরসমূহের জনমানুষের বিশ্রামের জায়গা, পার্ক ও স্কয়ার এবং রাস্তার দু’পাশে আরামদায়ক ছায়া দানে এগুলো অতুলনীয়। কোনো গাছকে যদি ‘শহরের ফুসফুস’ বলা হয় তবে সেটা এই পাউলোনিয়া গাছকেই বলা সম্ভব। এই গাছের পাতা বড় ও লোমশ হওয়ায় দূষিত বায়ুমন্ডলের ধোঁয়া ও ধুলা পরিশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলেই দূষণযুক্ত এলাকায় পরিবেশের উন্নয়নে এর ব্যাপক চাষাবাদ হয়ে থাকে।